- ১৯৬৮এর কান উৎসবের উদ্বোধনী আসরে পর্দা ধরে ঝুলে পরা বরেণ্য সব শিল্পীরা/ ছবিঃ http://www.focusfeatures.com এর সৌজন্যে
‘অনন্ত-বর্ষা কানে আমন্ত্রিত’ ‘কানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রদর্শনী’ গত কয়েকদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় চমকপ্রদ এই খবরটি দেখে মনটা খুব উৎসুক হয়ে ছিলো, কিন্তু কিছু দূর এগিয়েই ধরা খেলাম! তার আগে অন্য কয়েকটা কথা বলতে চাই। সালটা ১৯৬৮, প্যারিসে চলছে প্রচন্ড ছাত্র-শ্রমিক বিক্ষোভ আর কানে ২১তম চলচ্চিত্র উৎসব। জাঁক গদার আর ফ্রাঁঙ্ক ট্রুফোর নেতৃত্বে একদল তরুণ নির্মাতা স্টেজের পর্দা ধরে ঝুলে পরে মাঝপথে বন্ধ করে দিলেন উৎসব। বিক্ষোভে বিপ্লবে উৎসব দু’ভাগ হয়ে গেলো কান, পরের বছর থেকে শুরু হলো দু’টো উৎসব। বিশিষ্ট পরিচালকদের উদ্যোগে শুরু হলো ‘নির্মাতাদের উৎসব, নির্মাতাদের জন্য উৎসব’ – ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’, কালের পরিক্রমায় আজকে যা কান চলচ্চিত্র উৎসবের একটা অত্যন্ত সম্মানজনক অপরিহার্য অঙ্গ।
গত বছর কানে আনুরাগ কাশ্যপের যে ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার খবরে সমস্ত ভারতীয় গণমাধ্যম শিহরিত ছিলো, সেটা এই ডিরেক্টরস ফোর্টনাইনেই প্রদর্শিত হয়েছিলো। এ বছরও আনুরাগ কাশ্যপের একক পরিচালনায় যে ছবিটি কানে যাচ্ছে সেটাও এই আসরেই। ২০০৮ সালে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটের চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পুরষ্কারপ্রাপ্ত নির্মাতাদের বিশেষ মর্যাদায় আমন্ত্রণ জানায় কান উৎসব কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত ছিলেন তারেক মাসুদ। কারণ ২০০২ সালে মর্যাদাপূর্ণ এই আসরের উদ্বোধনী ছবি এবং আর্ন্তজাতিক সমালোচকদের পুরষ্কার, এই দুই বিরল সম্মান অর্জন করেছিলো ‘মাটির ময়না’।

তবু আশা জাগে যখন দেখি অভিনেত্রী জয়া আহসানকে কান কর্তৃপক্ষ লিখে পাঠায়, ‘একজন বহুমাত্রিক অভিনেত্রী হিসাবে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি’। জৌলুসপূর্ণ এই বিশ্ববরেণ্যের ভিড়ে জয়ার মৃদু পদচারনা আমাদের প্রজন্মের যাত্রা নিশ্চিত করে। জয়া আহসান আপনাকে অভিনন্দন। অভিনন্দন বাংলাদেশের আরও দুই তরুণ নারী চলচ্চিত্রকর্মী সারা আফরিন (শুনতে কি পাও!) এবং শিরীণ পাশাকে (সীমান্তের চড়ুইভাতি) যারা এ বছরের ‘প্রডিউসার্স নেটওয়ার্ক’এ নিজেদের যোগ্যতায়ই অংশ নিচ্ছেন। সেইসাথে শংকিত বোধ করি যখন দেখি সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত হিংআত্মক কিছু হত্যাকান্ডের অনলাইন কোলাজ দিয়ে নির্মিত নিরীক্ষাধর্মী স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি (অট্রোসিটি/ এবাদুর রহমান) খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে কিন্তু কানের মতো আসরে আমাদের বীভৎস উপস্থাপনা করে।